প্রকাশিত: Thu, Jun 1, 2023 4:32 AM
আপডেট: Sat, Jun 28, 2025 5:39 PM

‘ইন্দো-চিন ঠাণ্ডাযুদ্ধে স্থিরতা এনে দেবে বাংলাদেশ’

এ বি এম মাহমুদুল হাসান: এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চিন। আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ দুই দেশের সাথে সম-সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতটা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে, সে বিষয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা। একদিকে চিনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি; ভূ-রাজনীতির নতুন দুই সমীকরণে উভয় পক্ষই চাইছে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ! শেখ হাসিনার অবস্থান কী?

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার নীতি হচ্ছে ভারত, চিন ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে একই সঙ্গে খেলা। খেলছেনও বটে। যেমন- সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চিন, জাপান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে অর্থ দিতে চাইল। শেখ হাসিনা সবার কাছ থেকে অর্থ নিতে চাইলেন। তখন আর কেউ রাজি হলো না!

রোহিঙ্গা ইস্যু এনে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে চিন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে নিয়ে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করে তাঁকে মোটামুটি সফল বলেছেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। 

এছাড়া তিনি মনে করছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিরোধী থাকলেও শেখ হাসিনা চিনকে দিয়ে সেটা ব্যালেন্স করেছে। 

বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চিন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে, যা ভারতের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে ভারত আসতে নারাজ, তাই ভারত সাগরে পৌঁছাতে বঙ্গোপসাগরের মধ্যাঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই ব্যবহার করতে হবে চিনের। ফলে বাংলাদেশে আস্থা রাখছে চিন। ভূ-রাজনীতিতে নিজেদের এমন গুরুত্ব কি বুঝতে পারছেন শেখ হাসিনা? 

প্রশ্নের উত্তরটি পাওয়া যায় জাপানভিত্তিক সংবাদপত্র নিক্কেই এশিয়ান রিভিউতে প্রকাশিত ভারতের আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিশ্লেষক, জিনদাল স্কুলের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন শ্রীরাম চাউলিয়ার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেখ হাসিনার গুরুত্ব কতখানি তা তিনি জানেন, তাঁকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপায় নেই চিনের কাছে। ফলে অন্য যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে চিনের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের সম্পর্কই সবচেয়ে ভালো। সে সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনা অপেক্ষকৃত কম সুদে যেমন আদায় করেছেন চিনা ঋণ, তেমনি বিআরআই প্রকল্পে চিনের পরিবর্তে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজ করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ভারতের মনোভাব বুঝে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে চিনা প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বরং অনতিদূরে মাতারবাড়ী বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কাজ তুলে দিয়েছেন জাপানের হাতে। 

শ্রীরাম চাউলিয়া মনে করেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের ক্ষেত্রে চিন ও ভারত রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যমপন্থার কূটনীতিকে প্রশংসা করে ইন্দো-চিন ঠাণ্ডাযুদ্ধে স্থিরতা এনে দেবে বাংলাদেশ,  বলেও অভিমত দেন তিনি।

এ বি এম মাহমুদুল হাসান: প্রদায়ক প্রতিবেদক